উপসর্গগুলো
♦ সাধারণত উচ্চমাত্রার জ্বর, সারা দেহে হাড়ের মধ্যে ভয়ানক ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখের মণিতে ব্যথা থাকে। হাড়ের মধ্যে ভয়াবহ ব্যথার জন্য এই জ্বরের অপর নাম ব্রেক বোন ফিভার (হাড় ভাঙুনি জ্বর)।
♦ পেটে ব্যথা, এসিডিটি, বদহজম, বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া হতে পারে। এভাবে ডেঙ্গু ভাইরাস রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমিয়ে দেয়। গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের বেশির ভাগ সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক একজনের তুলনায় খুব বেশি দুর্বল করে দেয়।
♦ দাঁতের মাড়ি, নাক বা মলমূত্রের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে।
জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পরে অনেকের দেহে ব্রণের মতো লালচে র্যাশ বের হয়, যা খুব চুলকায়।
♦ অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়। জ্বরের সঙ্গে টনসিলের ইনফেকশন, কাশি, বুকে ব্যথা থাকে। গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি বিপজ্জনক।
বিশেষ করে গর্ভের সন্তানের জন্য।
♦ খুব দুর্বল লাগে। এই জ্বরে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। গর্ভবতী নারীদের হঠাৎ প্রস্রাবের পরিমাণ কমতে পারে, প্রচণ্ড পরিমাণে মাথা ঘোরায়। এ অবস্থায় গর্ভস্থ শিশু দুর্বল হয়ে যায়।
♦ গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অতিমাত্রায় বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্ষুধামান্দ্য এবং চোখে ঝাপসা লাগতে পারে। সাড়ে চার মাস থেকে ডেলিভারির আগে পর্যন্ত গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া কমতে পারে। হঠাৎ খুব বেশি রক্তক্ষরণ হলে গর্ভস্থ শিশু মারাও যেতে পারে। তবে ডেঙ্গু হলেই গর্ভস্থ শিশু মারা যাবে—এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
♦ ডেঙ্গুর পাশাপাশি নিউমোনিয়া, টনসিলে ইনফেকশনসহ বহুবিধ ইনফেকশন হতে পারে।
পরীক্ষা
জ্বর হওয়ার প্রথম দিনেই ডেঙ্গু এনএস ওয়ান অ্যান্টিজেন, সিবিসি পরীক্ষা করাতে হবে। জ্বর চার/পাঁচ দিনের বেশি হলে ডেঙ্গু টেস্ট নেগেটিভ আসতে পারে, কিন্তু প্লাটিলেট কমতে পারে। প্লাটিলেট হলো রক্তের জরুরি উপাদান। এ জন্য গর্ভবতী নারীদের নিয়মিত সিবিসি পরীক্ষা করাতে হবে।
সচেতনতা
♦ গর্ভস্থ নারীর রোগ প্রতিরোধ শক্তি অন্যদের তুলনায় কমে যায়। এ জন্য জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
♦ গর্ভাবস্থার আগে বা পরে নির্ণয় হওয়া কোনো অসুখ থাকলে, সেসব অসুখের চিকিৎসা করাতে হবে।
♦ প্রচুর পানি, তরল খাবার, হালকা টক ফল, ডাবের পানি ও ওরস্যালাইন নিয়মিত খেতে হবে। বাচ্চার নড়াচড়া খেয়াল করতে হবে।
♦ দিনে ও রাতে মশারির মধ্যে ঘুমাতে হবে। নিয়মিত পানি পান করার পরেও প্রস্রাবের মাত্রা কমে গেলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
♦ বাসা ও বাসার চারপাশে কোথাও কোনো পাত্রে পানি জমে থাকলে তা পরিষ্কার করতে হবে। ডেঙ্গু মশা এ ধরনের পানিতে বাসা বাঁধে।
♦ পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুব জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন এবং গর্ভাবস্থায় রক্ত নেওয়া অনুচিত।
♦ অবস্থা খারাপ হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।