বাংলাদেশের দুর্গতদের এপার বাংলায় আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছে BJP। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে এই মর্মে আক্রমণ শানিয়েছেন BJP নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ। তাঁর বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কেবলমাত্র দিল্লির সরকারের, রাজ্যের প্রশাসনের নয়। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। জেনে নিন বিস্তারিত খবর…
বাংলাদেশের কোনও অসহায় মানুষ দরজায় কড়া নাড়লে আশ্রয় দেবে এপার বাংলা।’ রবিবার একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে এ কথা জনান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে এবার তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তাঁর বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে একমাত্র দিল্লির সরকারের, কোনও রাজ্য প্রশাসনের নয়।
BJP-র আপত্তি
সোমবার BJP-র এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল বললেন বাংলাদেশে যা হচ্ছে তাতে যদি কেউ এসে তাঁর দরজায় কড়া নাড়েন তবে তিনি সাহায্য করবেন। পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় দেবেন তাঁদের। মমতাজি আপনিই সেই মানুষ যিনি CAA-এর বিরোধিতা করেছেন। অর্থাৎ সমস্যায় থাকা কোনও হিন্দু, শিখ, পারসি কিংবা খ্রিস্টানকে আপনি বাংলায় প্রবেশ করতে দেবেন না। মমতাজি সর্বদাই CAA-র বিরোধিতা করেছেন। অথচ সেই CAA-র সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকদের কোনও সম্পর্ক নেই। সে হিন্দু হোক কিংবা মুসলিম।’
কটি সাংবাদিক সম্মেলনে এ দিন রবিশঙ্কর প্রসাদ আরও বলেন, ‘মমতাজি, অখিলেশ যাদব এবং রাহুল গান্ধী এক নাগাড়ে সংবিধান নিয়ে সরব হচ্ছেন। আপনাদের কি জানা নেই সংবিধান অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার নয় কেন্দ্রের অধীনে পড়ে। এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরাও চাই এর দ্রুত সমাধান হোক।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর প্রশ্ন, ‘আপনি ঠিক কী চাইছেন? রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষ চন্দ্র বসুর বাংলায় এভাবে পরিবর্তন চাইছেন কেন? কলকাতার ডেমোগ্রাফিও বদলে দেওয়া হচ্ছে। আমি বাংলায় গিয়ে দেখেছি সেখানে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভিড়। উনি তো দেশের নিরাপত্তা নিয়ে বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন নন। NIA তদন্তেও দেখা গিয়েছে, বাংলায় একাধিক দুষ্কৃতীরা আস্তানা নিয়েছে।’
পাল্টা জবাব তৃণমূলের
এ প্রসঙ্গে এই সময় ডিজিটালের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল পরিষ্কার করে বলেছেন, রাষ্ট্রংসঘের স্বীকৃত মত অনুযায়ী, এই পরিস্থিতিতে মানুষকে সহযোগিতা করাই যায়। BJP যেটা করে তা ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদের রাজনীতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ মানবিক। দু’টোর মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে।’ শান্তনু সেনের সংযোজন, ‘CAA ধর্মের ভিত্তিতে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে নিপীড়িত মানুষদের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। রবিশঙ্কর প্রসাদ মোদীজির কাছে নম্বর বাড়ানোর জন্য এই ধরনের কথা বলছেন।’
কুণাল ঘোষ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ নিয়ে যা বলেছেন BJP সেটিকে বিকৃত করে পরিবেশন করছে। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি প্রথমেই বলেছেন, এটা বাংলাদেশের বিষয়, তিনি কিছু বলবেন না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ভারত সরকার। তবে কেউ যদি আশ্রয় চায় সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রসংঘের নীতি অনুযায়ীই তিনি আশ্রয় দেবেন। তার মানে তো দরজা খুলে নিয়ে যাকে-তাকে ঢুকতে দেবেন না। সীমান্তের দরজা খুলে দেওয়ার অধিকার বাংলার নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা বলেননি। BJP মিথ্যাচার করছে। নয়াদিল্লি যদি সীমান্ত দিয়ে কাউকে এ দেশে আসার অনুমতি দেয় আর সে ক্ষেত্রে যদি আশ্রয়ের প্রয়োজন হয় তবেই তা করবে বাংলার সরকার।
Source : eisamay